চিহ্ন, সঙ্কেত ও যোজ্যতা (Symbol, Formula, and Valency)
🔹 পরমাণু (Atom)
মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাকেই পরমাণু বলে।
পরমাণুর নামকে বোঝার সুবিধার জন্য চিহ্নের সাহায্য সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন পরমাণুর চিহ্ন ভিন্ন ভিন্ন হয়।
চিহ্ন (Symbol)
মৌলিক পদার্থের নাম যা দ্বারা সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় তাকে চিহ্ন বলে। অন্য কথায় বলা যায় মৌলিক পদার্থের একটি পরমাণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করাকেই চিহ্ন বলে।
⭐ চিহ্ন লেখার কয়েকটি পদ্ধতি ⭐
মৌলিক পদার্থের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর কে দিয়ে –
হাইড্রোজেন (Hydrogen) = H
অক্সিজেন (Oxygen) = O
কার্বন (Carbon) = C
নাইট্রোজেন (Nitrogen) = N
সালফার (Sulpher) = S
বোরন (Boron) = B
একই প্রথম অক্ষর বিশিষ্ট মৌল বিভিন্ন মৌল থাকলে, ওই গুলির চিহ্ন প্রকাশ করা হয় প্রথম অক্ষরটির সঙ্গে পরের অক্ষরটি যোগ করে কিংবা প্রথম অক্ষরের সঙ্গে জোরে উচ্চারিত অক্ষর যোগ করে –
ক্যালসিয়াম (Calcium) = Ca
ক্রোমিয়াম (Chromium) = Cr
ক্লোরিন (Chlorine) = Cl
ক্যাডমিয়াম (Cadmium) = Cd
সিজিয়াম (Cesium) = Cs
ব্রোমিন (Bromine) = Br
বিসমাথ (Bismuth) = Bi
বেরিয়াম (Barium) = Ba
বেরিলিয়াম (Berilium) = Be
মৌলের ল্যাটিন নামের প্রথম বা প্রথম দুটি অক্ষর অথবা প্রথম এবং জোরে উচ্চারিত অক্ষর দিয়েও চিহ্ন প্রকাশ করা হয় –
সোডিয়াম (Natrium) = Na
পটাশিয়াম (Kalium) = K
আয়রন (Ferrum) = Fe
লিড (Plumbum) = Pb
সিলভার (Argentum) = Ag
গোল্ড (Aurum) = Au
কপার (Cuprum) = Cu
মার্কারি (Hydragyrum) = Hg
Match the left column with the right one
👉 চিহ্নের তাৎপর্য (Significance of Symbol)
⭐ চিহ্ন মৌলের নাম সংক্ষেপে প্রকাশ করে।
⭐ চিহ্ন দিয়ে মৌলের একটি পরমাণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয়।
⭐ কোন মৌলের পারমাণবিক ওজন যত মৌলটি চিহ্ন দ্বারা তত ভাগ ওজনের মৌলটিকে বোঝায়।
⭐ কিছু এক পারমাণুবিক পদার্থ্য আছে যেমন - ক্যালসিয়াম (Ca), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), আয়রন (Fe), ইত্যাদি মৌলিক পদার্থের চিহ্ন অনু বা পরমাণু উভয়কেই প্রকাশ করে।
🔹 অণু (Molecule)
পদার্থের ক্ষুদ্রতম স্বাধীন কণা যার মধ্যে পদার্থের সমস্ত ভৌত ও রাসায়নিক গুন বর্তমান থাকে তাকেই অণু বলে।
সঙ্কেত (Formula)
চিহ্নের সাহায্যে মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের একটি অণুকে সংক্ষেপে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে সংকেত বলে।
⭐ একাধিক পরমাণু যুক্ত মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে পরমাণু গুলির চিহ্নের ডানদিকে নিচে পরমাণু সংখ্যা লিখে দেওয়া হয়।
হাইড্রজেন (H) – H2, অক্সিজেন (O) – O2, ওজন (O) – O3
সংকেত সমন্ধে ভালো করে জানতে গেলে, আরো দুটি বিষয় আমাদের ভালো করে বুঝতে হবে তা হলো যোজ্যতা এবং যৌগমূলক।
যোজ্যতা
একটি পরমাণু অন্য পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাকেই যোজ্যতা বলে।
সাধারণভাবে কোন মৌলের পরমাণু যে কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বা হাইড্রোজেন গঠিত যৌগের থেকে যে কয়টি হাইড্রোজেন পরমাণুকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে সেই সংখ্যাই হলো পরমাণুর যোজ্যতার পরিমাপ।
⭐ সাধারণত যোজ্যতা সর্বদা পূর্ণসংখ্যার হয়, ভগ্নাংশে হয় না।
⭐ একটি মৌলের একাধিক যোজ্যতা থাকতে পারে।
যৌগ মূলক
একাধিক পরমাণু পরস্পরের সঙ্গে বিশেষ ধরনের জোটবদ্ধ অবস্থায় থাকে ও সামগ্রিকভাবে একটি অখন্ড পরমাণুর মত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, এইরকম পরমাণু জোটকে যৌগমূলক বলে।
⭐ প্রত্যেকটি যৌগমূলক এর একটি নির্দিষ্ট যোজ্যতা আছে।
⭐ এরা স্বাধীনভাবে থাকতে পারেনা।
⭐ যৌগমূলক গুলি ধনাত্মক বা ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্থ হতে পারে, ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্থ মূলক গুলো রাসায়নিকভাবে ধাতুর মত আচরণ করে।
🔹 একযোজী যৌগ-মূলক:
নাইট্রেট (NO3‒), নাইট্রাইট (NO2‒), হাইড্রক্সাইড (OH‒), ক্লোরেট (ClO3‒), বাই-কার্বনেট (HCO3‒), পারমাঙ্গানেট (MnO4‒), অ্যালুমিনেট (AlO2‒), বাই-সালফেট (HSO4‒), ক্লোরাইড (Cl‒), ফ্লওরাইড (F‒), ব্রোমাইড (B‒), আয়োডাইড (I‒)।
🔹 দ্বিযোজী যৌগ-মূলক:
অক্সাইড (O=), সালফাইড (S=), সালফাইট (SO3=), সালফেট (SO4=), কার্বনেট (CO3=), জিঙ্কেট (ZnO3=), ডাইক্রোমেট (Cr2O7=)।
🔹 ত্রিযোজী যৌগ-মূলক:
ফসফাইড (P≡), ফসফেট (PO4≡), নাইট্রাইড (N≡) ।
Match the left column with the right one
👉 সঙ্কেত গঠন ও তার নামকরণের কিছু সাধারণ নিয়ম –
🔹 যৌগের সঙ্কেত লেখার সময় প্রথমে ধাতুর বা ধাতু-সদৃশ মূলকের যথাক্রমে চিহ্ন বা সঙ্কেত লিখে, তারপর অধাতুর বা অধাতু-সদৃশ মূলকের চিহ্ন বা সঙ্কেত যথাক্রমে লেখা হয়।
ধরি, একটি ধাতুর পরমাণু বা ধাতু-সদৃশ মূলকের যথাক্রমে চিহ্ন বা সঙ্কেত M ও তার যোজ্যতা x এবং ওপর একটি অধাতব পরমাণুর বা অধাতু-সদৃশ মূলকের যথাক্রমে চিহ্ন বা সঙ্কেত N ও তার যোজ্যতা y হলে।
M ও N দ্বারা গঠিত যৌগের সঙ্কেত হবে MyNx।
⭐ যে ধাতুর পরমাণুতে একের বেশি যোজ্যতা দেখা যায় সেক্ষেত্রে, ওই ধাতব পারমাণুগুলি দ্বারা উৎপন্ন যৌগে ধাতব মৌলটির নামের শেষে, অপেক্ষাকৃত কম যোজ্যতার দ্বারা গঠিত হলে –আস এবং বেশি যোজ্যতার দ্বারা গঠিত হলে –ইক শব্দ যোগ করে যৌগটির নামকরণ করা হয়।
যেমন – Cu (কিউপ্রাস্) - 1, Cu (কিউপ্রিক্) - 2; Hg (মার্কিউরাস্) - 1, Hg (মারকিউরিক্) - 2; Cr (ক্রমাস্) - 2, Cr (ক্রমিক্) - 3; Fe (ফেরাস্) - 2, Fe (ফেরিক্) - 3; Sn (স্ট্যানাস্) - 2; Sn (স্ট্যানিক্) - 4; As (আর্সেনাস্) - 3; As (আর্সেনিক্) – 5
⭐ অধাতুর পরমাণুতে একাধিক যোজ্যতা দেখা গেলে যুক্ত অপর পরমাণু সংখ্যা অনুযায়ী, 1-এর ক্ষেত্রে মনো, 2-এর ক্ষেত্রে ডাই, 3-এর ক্ষেত্রে ট্রাই, 4-এর ক্ষেত্রে টেট্রা, 5-এর ক্ষেত্রে পেন্টা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে যৌগটির নামকরণ করা হয়।
যেমন – নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), নাইট্রোজেন মনো অক্সাইড (NO), নাইট্রোজেন ট্রাই অক্সাইড (N2O3), নাইট্রোজেন টেট্রা অক্সাইড (N2O4), নাইট্রোজেন পেন্টা অক্সাইড (N2O5)